বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা: পশ্চিমবাংলার বিধানসভা নির্বাচনের ষষ্ঠ দফার ভোট গ্রহণ হবে বৃহস্পতিবার। এই দফায় ৩০৬ জন প্রার্থীর ভাগ্য পরীক্ষা হবে। তবে ১২ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। তাঁদের মধ্যে নির্দল প্রার্থী রয়েছেন ৮ জন, অন্যান্য ৪ জন। এ ছাড়া মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ৫ জন। এঁদের মধ্যে নির্দল রয়েছেন ৪ জন, সিপিএম ১ জন। সকাল ৭টায় শুরু হবে ভোট গ্রহণ। শেষ হবে সন্ধে সাড়ে ৬টায়। এই দফায় উত্তর দিনাজপুরের ৯টি আসনে, নদিয়ার ৯টি আসনে, উত্তর ২৪ পরগনার ১৭টি আসনে, পূর্ব বর্ধমানের ৮টি আসনে ভোট হবে।
এদিন ভোট নেওয়া হবে ১০ হাজার ৮৯৭টি বুথে। করোনা বিধি মেনে সব বুথ স্যানিটাইজ করা হয়েছে। প্রত্যেক ভোটারকে মাস্ক পরে আসতে হবে। না হলে ভোট দিতে দেওয়া হবে না। এ ছাড়া হাত স্যানিটাইজ করে তবে বুথে ঢুকতে হবে। তার আগে থার্মাল গান দিয়ে ভোটারদের শরীরের তাপমাত্রা মেপে নেওয়া হবে। কোচবিহারের শীতলকুচির ঘটনার পর নির্বাচন কমিশন এই দফার ভোট নিয়েও সতর্ক। কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোতায়েন থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। থাকছে কুইক রেসপন্স টিম, সেক্টর অফিসারদের দলও।
উল্লেখ্য, শীতলকুচির ঘটনা ছাড়াও প্রায় প্রতিটি দফাতেই বিক্ষিপ্ত ভাবে হিংসার ঘটনা ঘটেছে। পঞ্চম দফায়ও নদিয়ার বেশ কিছু জায়গায় রাজনৈতিক সঙ্ঘর্ষ হয়েছে। ভোট পরবর্তী হিংসায় সেখানে কয়েকজনের প্রাণহানিও হয়েছে। এই দফায়ও বেশ কিছু জায়গা অতিস্পর্শকাতর বলে জানা গিয়েছে। বিভিন্ন মহলের তরফে এই দফায় ব্যাপক হিংসার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বুথের ১০০ ও ২০০ মিটারের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। ভোটাদাতা, ভোটকর্মী, পুলিশ ও প্রশাসনের লোক ছাড়া কেউ ওই সীমার মধ্যে ঢুকতে পারবেন না।
তবে কোথাও হিংসার ঘটনা ঘটলে বরদাস্ত করা হবে না। কাউকে কোনও রকম হিংসার ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করতে দেখা গেলেই গ্রেফতার করতে হবে বলে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। সব কেন্দ্রের সীমান্ত এলাকাগুলিতে কঠোর নজরদারি শুরু হয়ে গেছে। এদিন যাঁদের ভাগ্য পরীক্ষা হবে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী মুকুল রায়, বিশ্বজিৎ দাস, সুব্রত ঠাকুর, শুভ্রাংশু রায়, পবন সিং, সুনীল সিং, অরিন্দম ভট্টাচার্য, কলিতা মাজি, শীলভদ্র দত্ত, রাহুল সিনহা, কংগ্রেস প্রার্থী আবদুস সাত্তার, শুভঙ্কর সরকার, মোহিত সেনগুপ্ত, সিপিএম প্রার্থী তন্ময় ভট্টাচার্য, দেবজ্যোতি দাশ, ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী আলি ইমরান রমজ, তৃণমূল প্রার্থী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, স্বপন দেবনাথ, অভিনেত্রী কৌশানি মুখোপাধ্যায়, উজ্জ্বল বিশ্বাস, পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা, কানাইয়ালাল আগরওয়াল, পরিচালক রাজ চক্রবর্তী, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, পার্থ ভৌমিক প্রমুখ।
মোট ৪৩টি কেন্দ্রে ভোট হবে এদিন। কেন্দ্রগুলি হল চোপড়া, ইসলামপুর, গোয়ালপোখর, চাকুলিয়া, করণদিঘি, হেমতাবাদ, কালিয়াগঞ্জ, রায়গঞ্জ, ইটাহার, করিমপুর, তেহট্ট, পলাশিপাড়া, কালিগঞ্জ, নাকাশিপাড়া, চাপড়া, কৃষ্ণনগর উত্তর, নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর দক্ষিণ, বাগদা, বনগাঁ উত্তর, বনগাঁ দক্ষিণ, গাইঘাটা, স্বরূপনগর, বাদুড়িয়া, হাবড়া, অশোকনগর, আমডাঙা, বিজপুর, নৈহাটি, ভাটপাড়া, জগদ্দল, নোয়াপাড়া, ব্যারাকপুর খড়দা, দমদম উত্তর, ভাতার, পূর্বস্থলী দক্ষিণ, পূর্বস্থলী উত্তর, কাটোয়া, কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট, আউশগ্রাম, গলসি।
এদিকে, তৃণমূলের তরফে নির্বাচন কমিশনের কাছে করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে শেষ তিন দফার ভোট একদিনে করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। বুধবার কমিশন তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, তিন দফার ভোট একদিনে করা সম্ভব নয়। দফা অনুযায়ীই ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গিয়েছে। এখন এত অল্প সময়ে নতুন করে সমস্ত ভোট একদিনে করার প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন :পঞ্চভূতে বিলীন স্তব্ধশঙ্খ